বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষক আবিষ্কার

প্রকাশঃ জুলাই ১১, ২০১৬ সময়ঃ ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:১২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

carbon-live

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে সমগ্র পৃথিবী। আর এই উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ। কিন্তু এমন সময় আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশরি এক বিজ্ঞানী। বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. শুভ জিৎ দত্তের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ কোরিয়ার সোহাং বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টকহোম ইউনিভার্সিটি এবং সুইডেনের একদল গবেষক একটি নতুন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষক আবিষ্কার করেছেন। যা সস্তা, সহজ এবং খুব কার্যকরভাবে ফ্লু গ্যাস ও বায়ুমণ্ডল থেকে ডিহাইড্রেশন স্টেপ ব্যতীত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে।

নতুন এ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষক আবিষ্কার নিয়ে ড. শুভ জিৎ দত্ত বলেন, ‘বর্তমানে এটা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষক, যা জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে অত্যন্ত কার্যকরভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। অন্য শোষকের ক্ষেত্রে কার্বন ডাই-অক্সাইড আর জলীয় বাষ্পের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় এবং জলীয় বাষ্প সাধারণত জিতে যায়। আমাদের শোষক উভয়ই শোষণ করে, যদিও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক গুণ বেশি।’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ফ্লু গ্যাস ও বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের জন্য এটি শিগগিরই ব্যবহার করা হবে এবং তার জন্য সঠিক দিকেই যাচ্ছি।’

বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. শুভ জিৎ দত্তের নেতৃত্বাধীন এ আবিষ্কার ‘সাইন্স’ ম্যাগাজিনসহ ইউএস ডিপার্টমেন্ট এনার্জি, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ৪০টিরও বেশি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে, সম্প্রতি ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক রিপোর্টে বলা হয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে আছে। এর আগে জাতিসংঘও বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সতর্ক করে। এছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাপলক্রাফটের এক প্রতিবেদনেও সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় রেখেছে বাংলাদেশের নাম।

এর আগে, ২০১১ সালে জাতিসংঘের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর ১৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ঝুঁকি এখন সবচেয়ে বেশি। বৈশ্বিক এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ মানুষ প্রায় প্রতিবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণ করে থাকে মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলো। বিশ্বে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, রাশিয়া ও জাপান সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে থাকে। কারণ তাদের শিল্প, কল-কারখানা চালাতে প্রচুর এনার্জির প্রয়োজন হয়, যা আসে সস্তা কয়লা পোড়ানো থেকে। কয়লা পোড়ালে ফ্লু গ্যাস উৎপন্ন হয়। যার প্রধান উপাদান হলো নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড আর জলীয় বাষ্প।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ১৯৮৫ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৩৫০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। ২০১৫ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ পিপিএম-এ। তাদের মতে, ২০৪৫ সালে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০পিপিএম-এ পৌঁছাবে। বায়ুমণ্ডলে এ ক্ষতিকর গ্যাস যে গতিতে বাড়ছে, তা খুবই উদ্বেগের।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানির অ্যাসিডিফিকেশন বৃদ্ধি করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৫০-৮৫ শতাংশ অক্সিজেন আসে টিনি অসেন প্লান্টস (tiny ocean plants) থেকে, যা ফাইটোপ্লাংটন (phytoplankton) নামে পরিচিত। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা আর অ্যাসিডিফিকেশন বৃদ্ধির ফলে ফাইটোপ্লাংটন (phytoplankton) থেকে অক্সিজেন উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাবে।

এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের সংখ্যা দিন দিন তো বাড়ছেই।

পরিবেশের এমন নাজুক পরিস্থিতে বাংলাদেশী বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষক অত্যন্ত সুফল বয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G